ফরজ নামাজে সালাম ফিরিয়ে পঠিতব্য দুয়া ও যিকির।
>> ফরজ সালাত শেষে রাসূল(সা:) কখনও জামাআতবদ্ধভাবে দুআ, মুনাজাত করেননি।
>> প্রত্যেক নামাযে সালাম ফেরানোর পর রাসূল(সা:) ইমাম অবস্থায় কিবলার দিক থেকে ঘুরে মুক্তাদিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন।(বুখারী-৮৪৫)।
>> ফরজ নামাজে সালাম ফিরিয়ে রাসূল(সা:) অনেক দুয়া ও যিকির করেছেন। সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ন ও সহজ কিছু দেওয়া হলো যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও ফজিলতপূর্ন।
>>>>>> ১.أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ(তিন বার)।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।(সহিহ মুসলিম: ১৩৬২)।
>>>>>> ২.اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়াজাল জালালি ওয়াল ইকরাম। (১বার)।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময় এবং তোমা হতেই শান্তি উৎসারিত হয়।। তুমি বরকতময় হে মহান ও সম্মানের অধিকারী।
(মুসলিম শরিফ: ১৩৬২)।
>>>>> ৩. সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার। এর পর ১ বার
لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু। ওয়ালাহুল হামদু। ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। অথবা আল্লাহু আকবার দিয়ে ১০০ পূর্ণ করা যায়।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা তার। তিনি সবকিছুর ওপর সামর্থ্যবান।
নবী(সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার পাঠ করার পর এই দোয়া (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু...) ১বার পাঠ করে মোট ১০০ বার পূর্ণ করবে তার সমস্ত গুনাহ(ছগীরা) মাফ হয়ে যাবে; যদিও তা সুমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।
(সহিহ মুসলিম: ১৩৮০)।
>>>>> ৪. আয়তুল কুরসী পাঠ:
বাংলা উচ্চারন-আল্লাহু লা (আ)ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাওম। লাহু মা ফিছ ছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্।মান জাল্লাজী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু(উ) ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খাল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল্ মিহি(হি) ইল্লা বিমা সা (আ) ওয়াসিয়া কুরসি ইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিউল আজীম।
অর্থ- আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোন মাবুদ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, তাঁহাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করিতে পারে না। আসমান ও জমীনে যাহা কিছু আছে সব তাঁহারই। এমন কে আছে, যে নাকি তাঁহার অনুমতি ব্যতিত তাঁহার নিকট সুপারিশ করিবে? তাহাদের (লোকদের) সম্মুখে যাহা কিছু আছে এবং তাহাদের পশ্চাতে যাহা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন, এবং তাহারা তাঁহার(আল্লাহ তায়ালার) জ্ঞ্যানের কিছুই আয়ত্তে আনিতে পারে না, তবে তিনি যাহা ইচ্ছা করেন। তাঁহার কুরছী আসমানসমুহ ও জমীনের সর্বত্রই ঘিরিয়া রহিয়াছে। আর এই দুইটির রক্ষনাবেক্ষন করা তাঁহার পক্ষে মোটেই কঠিন নয়, এবং তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।
ফজীলত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে জান্নাতে যাওয়া থেকে মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছুই বাঁধা দিতে পারবে না।” (মুসলিম, নাসাঈ )।
শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে না পারে’ (বুখারী)।
>>>>> ৫.ফজর ও মাগরীব নামাযে সালাম ফিরিয়ে ৭ বার “আল্লাহুম্মা আজীরনী মিনান্নার”।
অর্থ- হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।
রাসূল(সা:) বলেছেন, এ দোয়া নিয়মিত পড়লে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত লিখে দেওয়া হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর কারো সঙ্গে কথা না বলে এই দোয়াটি [আল্লাহুম্মা আযিরনী মিনান্নার] ৭ বার পাঠ করলে উক্ত দিনে বা রাতে মৃত্যু হলে তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি লিখে দেওয়া হয়। (মেশকাতুল মাসাবীহ)।
ইমাম মুসলিম ইবনে হারেস ইবনে মুসলিম তামীমী (রহঃ) বলেন, আমার পিতা ইবনে হারেস (রাঃ) এক যুদ্ধ থেকে ফিরার পর রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, ফযরের নামায শেষে কারো সাথে কথা বলার আগে তুমি ৭ বার এ দোয়া পড় “আল্লাহুম্মা আযিরনী মিনান্নার”। অর্থাৎ আয় আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। যদি সেদিন তোমার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত বলে লিখে দিবেন। এমনিভাবে মাগরিবের নামায শেষে কারো সাথে কথা বলার আগে তুমি ৭ বার একই দোয়া পড়ো এবং যদি সে রাত্রে তোমার মৃত্যু হয় তবে আল্লাহ তাআ’লা তোমাকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত বলে লিখে দিবেন।(আবু দাউদ)।
>>>>> ৬. ফজর ও মাগরীব বাদ সূরা ইখলাস ৩ বার, সূরা ফালাক ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার। অনান্য ফরয সালাতের শেষে এ ৩টি সূরা একবার করে।
>>>>> ৭. لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা-মানিয়া লিমা আতাইতা। ওয়া-লা মুতিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।(১বার)।
অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক। তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্বের মালিক তিনি। সকল প্রশংসা তার। তিনি সব কিছুর ওপর সামর্থ্যবান। আপনি দিলে কেউ বাঁধা দিতে পারে না। আপনি না দিলে কেউ দিতে পারে না, কেউ উপকার করতে পারে না।
(সহিহ বোখারি ও মুসলিম)।
>> এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য শুনুুন শেইখ মতিউর রহমান মাদানীর লেকচার।